বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে ভাষণ প্রদান। - Probash Bangla Tv | প্রবাস বাংলা টেলিভিশন

Breaking

Post Top Ad

বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে ভাষণ প্রদান।

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম



প্রিয় দেশবাসী,

আসসালামু আলাইকুম,

হিজরি ৬১ সনের পবিত্র এই দিনে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়াসাল্লাম-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা শহিদ হয়েছিলেন। আমি তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলার মাটিতেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে আরেক কারবালা বাংলার মাটিতে সৃষ্টি হয়েছিল। যারা শাহাদাতবরণ করেছেন, আমি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং ২ লাখ নির্যাতিতা মা-বোনের প্রতিও শ্রদ্ধা জানাই।

প্রিয় দেশবাসী,

আজকে অত্যন্ত বেদনা-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।

লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বিগত ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ব্যবহার এবং মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষার ব্যবস্থা করে জনগণকে উন্নত জীবন দেওয়ার যাত্রা শুরু করেছি। অনেক সাফল্যও অর্জন করেছি। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটি মর্যাদাপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। তারপরও আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ যখন একটু স্বস্তি-শান্তিতে ফিরে, তখন মাঝে-মধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

২০১৮ সালে ছাত্র সমাজের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কোটা বহাল রাখার পক্ষে উচ্চ আদালত ২০১৮ সালের জারি করা সরকারের পরিপত্র বাতিল করে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে পরিপত্র বহাল রাখার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয় এবং মহামান্য আদালত শুনানির দিন ধার্য করে। এ সময় আবার ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। বরং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা করেছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যখন আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি প্রদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, সেক্ষেত্রে তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো- কিছু মহল এই আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এর ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল। আপনজন হারাবার বেদনা যে কত কষ্টের, তা আমার থেকে আর কে বেশি জানে।

যারা মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই। যে সব ঘটনা ঘটেছে, তা কখনই কাম্য ছিল না। চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীরা বহুতল ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। অনেক ছাত্রদের হাত পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। তাদের উপর লাঠিপেটা এবং ধারালো অস্ত্র দ্বারা আঘাত করা হয়েছে। একজন মৃত্যুবরণ করেছে, অনেকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। ঢাকা, রংপুর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবন ও ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে।

সাধারণ পথচারী, দোকানীদের আক্রমণ, এমনকি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা প্রদান করা হয়েছে। মেয়েদের হলে ছাত্রীদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আবাসিক হলে প্রভোস্টদের হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং আক্রমণ করা হয়েছে। শিক্ষকদের উপর চড়াও হয়ে তাদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে।

আমি বিশ্বাস করি, যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত তাদের সাথে এই সব সন্ত্রাসীদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং সন্ত্রাসীরা এদের মধ্যে ঢুকে সংঘাত ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তাদের পরিবারের জন্য জীবন-জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা দরকার, তা আমি করব।

আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি, যারা হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে; এরা যেই হোক না কেন, তারা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমি আরও ঘোষণা করছি, হত্যাকাণ্ডসহ যে সব অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, সুষ্ঠু বিচারের ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে সে সব বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।

কাদের উস্কানিতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হলো, কারা কোন উদ্দেশ্যে দেশকে একটি অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিল, তা তদন্ত করে বের করা হবে।

আমি আন্দোলনরত কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এই সন্ত্রাসীরা যেকোনো সময় সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করে তাদের ক্ষতিসাধন করতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের প্রতি আমার আবেদন, তারা যেন তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ থাকেন। একই সাথে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষভাবে নজর রাখেন।



সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে। আপিল আদালতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালত শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য থাকলে, তা শোনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।

এই আইন প্রক্রিয়া সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতিকারীদের সংঘাতের সুযোগ করে দেবেন না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য আমি সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস আমাদের ছাত্র সমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায় বিচারই পাবে, তারা হতাশ হবে না।

ইনশাল্লাহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সবার সহযোগিতায় স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।

আমি আবারও এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় যারা নিহত হয়েছে, তাদের জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি এবং পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাচ্ছি।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad